বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে যেকোন জবে আবেদনের পর ইন্টারভিয়ের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়ার ক্ষেত্রে একটি প্রফেশনাল সিভি বা রেজ্যুমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে চাকরিপ্রার্থীগণ বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রচুর আবেদন করলেও ইন্টারভিউতে ডাক পাওয়ার হার খুবই কম। স্কিল জবস এর একটি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে একজন ফ্রেশার বা এক বছরের কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চাকরিপ্রার্থী প্রতি ১০ থেকে ১৫টি কোম্পানিতে চাকরির আবেদনের প্রেক্ষিতে গড়ে ১ থেকে ২টি কোম্পানিতে ইন্টারভিউয়ের সুযোগ পান। আর ইন্টারভিউ এর জন্য সিলেক্ট না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে সঠিক উপায়ে রেজ্যুমে বা সিভি আপটেড না করা।
আপনাকে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে আপনার রেজ্যুমেটিই হচ্ছে এমপ্লয়ারকে ইমপ্রেস করার প্রথম উপায়। সুতরাং আপনার সিভি বা রেজ্যুমেটি যদি ইম্প্রেসিভ না হয় তাহলে আপনি যত বেশি কোম্পানিতেই আবেদন করেন না কেন, আপনার ইন্টারভিউ কল পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। মনে রাখতে হবে যে আপনার আপনার রেজ্যুমেটি শুধু মাত্র একটি ‘লিষ্ট অব স্কিলস’ নয়, এটি আপনার গল্প। এই রেজ্যুমের মাধ্যমেই এমপ্লয়ার আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারে এবং এবং আপনি তাদের কোম্পানিতে কাজ করার যোগ্য কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। সুতরাং, আপনার সিভি বা রেজ্যুমেটি এমন হওয়া উচিৎ যা আপনাকে অন্য প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা হিসেবে উপস্থাপন করবে এবং ইন্টারভিউয়ের জন্য কল পাওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিবে।
দ্রষ্টব্য: এই আর্টিকেলে আমরা সিভি এবং রেজ্যুমে প্রতিশব্দ হিসাবে ব্যবহার করব।
সিভি লেখার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস
এই আর্টিকেলটি আপনাকে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারের জন্য একটি আউটস্ট্যান্ডিং সিভি তৈরি করতে সাহায্য করবে। এখানে সিভি লেখার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস শেয়ার করা (CV writing tips) হবে যা আপনাকে আপনার পছন্দের চাকরিটি খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।
১. শুরুতেই আপনার কন্টাক্ট ইনফরমেশন উল্লেখ করুন (Contact Information)
একিটি প্রফেশনাল সিভি বা রেজ্যুমের শুরুর অংশটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশে সাধারণত চাকরিপ্রার্থীর নাম, ঠিকানা, কন্টাক্ট ডিটেলস, সোশ্যাল মিডিয়া লিংক এবং ছবি থাকে। কন্টাক্ট ডিটেলসে (contact details) আপনার আপডেটেড ফোন নাম্বার এবং ইমেইল উল্লেখ করতে ভুল করবেন না। পাশাপাশি আপনার বর্তমান ঠিকানা, পোর্টফোলিও সাইটের লিংক (যদি থাকে) এবং একটি প্রফেশনাল ছবি আপনার সিভির এই অংশে যুক্ত করুন।

২. একটি শক্তিশালী “ক্যারিয়ার সামারি” লিখুন (Career Summary)
আপনার “ক্যারিয়ার সামারি” (Career Summary) হল আপনার সিভির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা নিয়োগকর্তাদের আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং ক্যারিয়ারের লক্ষ্য সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়। আপনার “ক্যারিয়ার সামারিটি” তিন থেকে চার লাইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন। ক্যারিয়ার সামারিতে শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা হাইলাইট করুন, অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা লিখে ক্যারিয়ার সামারি লম্বা করার দরকার নেই। আপনার “ক্যারিয়ার সামারি” স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত রাখুন এবং সেখানে আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্যসমূহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন।

৩. আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা তুলে ধরুন (Educational Qualifications)
সিভিতে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। আপনি যদি সিভিতে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে না পারেন তাহলে ইন্টারভিউয়ের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। শিক্ষাগত যোগ্যতা লেখার ক্ষেত্রে আপনার সর্বশেষ ডিগ্রি থেকে শুরু করতে হবে অর্থাৎ প্রথমে মাস্টার্স এর পর অনার্স পরে এইচ.এস.সি এবং সবার শেষে এস.এস.সি এইভাবে বিপরীত ক্রম (reverse order)’এ লিখতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নাম, ডিগ্রি, প্রধান বিষয় (major), GPA এবং পাশের সাল অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৪. প্রাসঙ্গিক কাজের অভিজ্ঞতা মেনশন করুন (Work Experience)
আপনার সিভির অভিজ্ঞতা (Work Experience) অংশটি হল আপনার সামগ্রিক দক্ষতা, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ। এটি কেবলমাত্র আপনি কোথায় এবং কখন কাজ করেছেন তা উল্লেখ করার চেয়ে বেশি। এটি নিয়োগকর্তাদের কাছে নিজেকে অন্য প্রার্থীদের থেকে আলাদা হিসেবে প্রমান করার একটি সুযোগ। এটি সেই জায়গা যেখানে আপনি আবেদনকৃত পদের জন্য প্রয়োজনীয় স্কিলস হাইলাইট করতে পারেন এবং আপনি কীভাবে অতীতে সফল হয়েছেন বা বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করেছেন সে সম্পর্কে উদাহরণ দিতে পারেন। আপনার যদি কোন ধরণের প্রফেশনাল এক্সপেরিয়েন্স না থাকে তাহলে সিভিতে এক্সপেরিয়েন্স হিসেবে ইন্টার্নশিপ, প্রশিক্ষণ বা কর্মশালায় অংশগ্রহণ, কোন প্রজেক্টে কাজ করা ইত্যাদি উল্লেখ করতে পারেন।

৫. আপনার স্কিলস তালিকাভুক্ত করুন (Skills and Qualifications)
আপনার সিভির “Skills and Qualifications” অংশটি নিয়োগকর্তাদের কাছে আপনার দক্ষতা, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ প্রদান করে। এখানে টেকনিক্যাল স্কিলস’এর পাশাপাশি আপনার টিমওয়ার্ক, প্রভলেম সলভিং এবং কমিউনিকেশনের মতো সফ্ট স্কিলগুলোও সুন্দর ভাবে উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি কিছু ইন্টারপার্সোনাল স্কিলস যেমন উদ্যমী (enthusiastic), দ্রুত শেখা (quick learning), বিশ্বস্ততা (trustworthy) ইত্যাদি এইখানে তুলে ধরা উচিত।

৬. আপনার ট্রেনিং এবং সার্টিফিকেশন সংক্রান্ত তথ্য দিন (Training and Certifications)
আপনার সিভির “Training and Certifications” অংশটি আপনার স্কিলস ডেভেলপমেন্টের আগ্রহকে এমপ্লয়ারের কাছে তুলে ধরে। আপনি যদি আপনার সিভিতে বেশ কিছু প্রফেশনাল ট্রেইনিংএর কথা উল্লেখ্য করেন তখন আপনার এমপ্লয়ার বুঝতে পারবেন যে নতুন নতুন দক্ষতা অর্জনের ব্যাপারে আপনার আগ্রহ রয়েছে। এক্ষেত্রে, প্রতিটি ট্রেনিং এন্ট্রির জন্য প্রতিষ্ঠানের নাম, প্রশিক্ষণ/সার্টিফিকেশনের বিষয় এবং সম্পন্ন করার তারিখ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, “কোর্সের নামঃ ডেটা সাইন্স এবং মেশিন লার্নিং কোর্স, প্রতিষ্ঠানঃ স্কিল জবস, তারিখঃ জানুয়ারি ২০২৪”।

৭. এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস সম্পর্কে লিখুন (Extra Curricular Activities)
সিভিতে “Extra Curricular Activities” যোগ করা বাধ্যতামূলক না হলেও এটি নিয়োগকর্তাদের আপনার দক্ষতা আরও সার্বিকভাবে বুঝতে সাহায্য করে। স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, ক্লাব সদস্যপদ বা খেলাধুলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আপনি যে দলগত কাজ, সমস্যা সমাধান, নেতৃত্ব বা সময় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা অর্জন করেছেন এক্সট্রাকাররিক্যুলার এক্টিভিটিজ এর মাধ্যমে সিভিতে তা তুলে ধরতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক ক্লাবের সভাপতি হিসেবে দুই বছর কাজ করে যোগাযোগ ও দল পরিচালনার দক্ষতা অর্জন”। এভাবে, আপনি কয়েকটি শব্দেই নিয়োগকর্তাকে জানাতে পারেন যে আপনার কাছে শুধু ডিগ্রি নয়, দক্ষতাও আছে।

৮. রেফারেন্স প্রদান করুন (References)
সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে কখনোই আত্মীয়স্বজনকে দেবেন না, কারণ তারা নিরপেক্ষ মতামত দিতে পারবেন না। বরং, কোন শিক্ষক বা কর্মক্ষেত্রের সিনিয়রের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তাদের তথ্য দিন। সিভিতে ভুল তথ্য দেওয়া একেবারেই চলবে না। রেফারেন্সদের পুরো নাম, পদবী, প্রতিষ্ঠান, ঠিকানা ও ফোন নম্বর সঠিকভাবে লিখুন। তাদের জানান যে আপনি তাদের রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করছেন এবং সিভি ও কভার লেটারের কপি পাঠিয়ে দিন। এভাবে আপনি নিশ্চিত করতে পারেন যে আপনার রেফারেন্স অংশটি পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভরযোগ্য।

৯. প্রতিটি জবে আবেদনের সময় আপনার সিভি কাস্টমাইজ করুন (Customize Your CV)
প্রতিটি জবের জন্য আলাদা আলাদা রিকোয়ার্মেন্ট থাকে। তাই, প্রতিটি চাকরির আবেদনের জন্য আপনার সিভি একটু করে খাতিয়ে নেওয়া জরুরি। আবেদন করার আগে চাকরির বিজ্ঞপ্তিটি পড়ে দেখুন এমপ্লয়ার সেখানে কোন দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা খুঁজছে। তারপর আপনার সিভিতে সেই দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাগুলিকে আরও জোর দিয়ে তুলে ধরুন।

১০. সঠিক ফরমেট এবং ফন্ট ব্যবহার করুন
আপনার সিভির ফরম্যাট পড়তে আকর্ষণীয় হলে, নিয়োগকর্তারা তা পড়ে দেখার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এর ফলে আপনার ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পাওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। তাই আপনার সিভির জন্য একটি প্রফেশনাল ফরম্যাট নির্বাচন করা খুব জরুরি। আপনার সিভিটি ডক ফাইল হিসেবে সংরক্ষণ করুন। কারণ আপনি নিয়মিত আপডেট করবেন, এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা ফাইল তৈরি করতে হবে। ফাইলের নাম সঠিকভাবে লিখুন। আপনার রেজ্যুমেটি সেভ করার সময় “My CV.doc” এজাতীয় নামের পরিবর্তে “নিজের নাম” স্ল্যাশ বা আন্ডারস্কোর সিভি ডট পিডিএফ (Name_CV.pdf) এইভাবে সেভ করতে হবে।
আপনার সিভি পিডিএফ ফাইল হিসেবে পাঠান। টাইমস নিউ রোমান, অ্যারিয়্যাল, বা ভারদানা ফন্ট ব্যবহার করতে পারেন। ফন্ট সাইজ ১১-এর কম হবে না। মাঝেমধ্যে বোল্ড এবং হেডার অপশন ব্যবহার করুন। তবে অবশ্যই কালো রঙ ব্যবহার করতে হবে।

সিভি বা রেজ্যুমে লেখার ক্ষেত্রে কিছু কমন ভুল
সিভি বা রেজ্যুমে হলো আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ যা আপনি চাকরির আবেদনের সময় ব্যবহার করেন। একটি ভালোভাবে লেখা সিভি আপনাকে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দিতে পারে এবং আপনার পছন্দের চাকরি পেতে সাহায্য করতে পারে। তবে, অনেক লোক সিভি বা রেজ্যুমে লেখার সময় কিছু সাধারণ ভুল করে থাকে। এই ভুলগুলো আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে। এখানে সিভি বা রেজ্যুমে লেখার ক্ষেত্রে কিছু কমন তুলে ধরা হলোঃ
বানান এবং ব্যাকরণ ভুল
সিভিতে বানান বা ব্যাকরণের ভুল থাকলে এমপ্লয়ার আপনার ব্যাপারে খারাপ ধারণা করতে পারে। এতে মনে হতে পারে আপনি অমনোযোগী বা অপেশাদার। ভুল ক্রিয়াপদ, বিরাম চিহ্নের ভুল বা শব্দের অপব্যবহার এসব ভুল এড়িয়ে চলুন। কমপ্লিট করার পর আপনার রেজ্যুমেটি জোরে পড়ে ভুল শুনুন, অন্য কাউকে প্রুফ রিড করতে দিন। মনে রাখতে হবে, ভুলমুক্ত সিভি আপনার যোগ্যতা আরও জোরালো করে তুলবে।
অপ্রাসঙ্গিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা
সিভিতে অপ্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন নেই। নিয়োগকর্তারা আপনার কাজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা, এবং আবেদনকৃত পদের জন্য প্রাসঙ্গিক দক্ষতা জানতে চান। ব্যক্তিগত মতামত, রাজনীতি, ধর্ম, বা শখের মতো তথ্য আপনার সিভি লম্বা ও বিশৃঙ্খল করে তুলতে পারে। চাকরির বিজ্ঞপ্তিটি ভালো করে পড়ুন, সেখানে প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো ইডেন্টিফাই করুন, এবং আপনার সিভিতে সেগুলোই হাইলাইট করুন। মনে রাখবেন, নিয়োগকর্তাদের সময় কম, তাই আপনার সিভিতে সংক্ষিপ্ত এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করুন।
অস্পষ্ট বা অসম্পূর্ণ তথ্য
সিভিতে অস্পষ্ট বা অসম্পূর্ণ তথ্য লিখবেন না। কী করলেন, কখন করলেন, কতটা করলেন – সব ঠিক মতো লিখুন। সিভিতে ” দায়িত্ব পালন” এর চেয়ে “বিক্রয় ১৫% বাড়ানো” লিখলে নিয়োগকর্তাদের বেশি ভালো লাগে। শিক্ষা, দক্ষতা – সবকিছুই সঠিক তথ্য সহ উল্লেখ করুন। নিয়োগকর্তারা সময়ের অভাবে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন, তাই স্পষ্ট তথ্য দেওয়া জরুরি।
ফর্ম্যাটিং ত্রুটি
সিভির ফর্ম্যাটিং ভুল করবেন না! অস্পষ্ট ফন্ট, এলোমেলো মার্জিন, ভুল বানান – এইসবের কারণে আপনার সিভিটি অপেশাদার দেখায়। নিয়োগকর্তারা প্রথমেই ফর্ম্যাটিং দেখবেন, তাই সহজ ফন্ট, সামঞ্জস্যপূর্ণ মার্জিন এবং লাইন স্পেসিং রাখুন। টেবিল বা গ্রাফ কেবল জরুরি হলে দিন। পিডিএফ ফাইলে সিভি সেভ করুন। একটু সাবধানে ফর্ম্যাট করলেই আপনার যোগ্যতা আরও ঝলমল করবে!
কাজের অভিজ্ঞতা সেকশনের দুর্বল বর্ণনা
সিভিতে কাজের অভিজ্ঞতা লিখতে “দায়িত্ব পালন” বা “টিম প্লেয়ার” লেখা যথেষ্ট নয়। এখানে কী করলেন, কীভাবে করলেন, ফলাফল কী হলো – সেসব লিখুন। নির্দিষ্ট উদাহরণ, সংখ্যা ব্যবহার করুন। যেমন, “বিক্রয় ১০% বাড়ানো” বা “৩ মাসে একটি নতুন পণ্য চালু করার প্রকল্প পরিচালনা”। এতে নিয়োগকর্তা বুঝতে পারবেন আপনার দক্ষতা কতটা।
সংযুক্তি (attachment) না পাঠানো
সিভির সাথে সংযুক্তি (attachment) না দেওয়া ভুল! নিয়োগকর্তারা হয়তো সিভে থেকে সব কিছু বুঝতে পারবেন না। তাই শিবির সাথে কভার লেটার, পোর্টফোলিও, সার্টিফিকেট – এসব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিন। এতে আপনার আবেদন আরও জোরদার হবে।
সিভি লেখা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (Resume Writing FAQs)
আমার সিভিতে কী কী বিভাগ থাকা উচিত?
উত্তর: সিভিতে কী কী থাকবে? সাধারণত নাম, ঠিকানা, ফোন, ইমেল, একটি ছোট পরিচিতি, শিক্ষা, কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা – এসব থাকে। পুরস্কার, প্রকাশনা, স্বেচ্ছাসেবক কাজ – থাকলে দিতে পারেন। রেফারেন্সের তথ্যও রাখুন কিন্তু সিভিতে দেওয়ার আগে তাদের জানান। দুই পাতা ছাড়ালে লম্বা হবেন না, সহজ ভাষা এবং সঠিক বানান লিখুন। আপডেট রাখাও জরুরি!
আমার সিভি কতটা লম্বা হওয়া উচিত?
উত্তর: আপনার সিভি দুই পৃষ্ঠার বেশি লম্বা হওয়া উচিত নয়। নিয়োগকর্তারা সাধারণত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন, তাই আপনার সিভিতে সংক্ষিপ্ত এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ।
আমি কীভাবে আমার সিভিতে কীওয়ার্ড (keyword) ব্যবহার করব?
উত্তর: আপনার সিভিতে কীওয়ার্ড ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি নিয়োগকর্তাদের কাছে আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে পারেন। চাকরির বিজ্ঞাপনটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং নিয়োগকর্তা যে দক্ষতাগুলি খুঁজছেন সেগুলি চিহ্নিত করুন। তারপর, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা বিভাগে সেই কীওয়ার্ডগুলি ব্যবহার করুন। তবে, আপনার সিভিতে প্রতিটি লাইনে কীওয়ার্ড ব্যবহার করার দরকার নেই। কিছু অনলাইন টুল আছে যা আপনাকে আপনার সিভিতে কীওয়ার্ড খুঁজে পেতে এবং ব্যবহার করতে সাহায্য করতে পারে। মনে রাখবেন কীওয়ার্ড ব্যবহার করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আপনার সিভি কতটা ভালো লেখা।
আমি কি আমার সিভিতে সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের লিঙ্ক (link) দেব?
উত্তর: সিভিতে সোশ্যাল মিডিয়া লিঙ্ক দেওয়া ঐচ্ছিক কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমপ্লয়ার যদি আপনার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চায় তাহলে তারা আপনার সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ভিজিট করতে পারে। তবে তা কিছু নিয়োগকর্তা দেখতে চাইতে পারেন, সবাই না। সিভিতে সোশ্যাল মিডিয়া লিংক যুক্ত করার আগে কিছু কিছু বিষয় যেমন আপনার প্রোফাইলে শুধুমাত্র পেশাদার তথ্য পোস্ট করা, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে প্রফেশনাল ভাবে উপস্থাপন করা, নিজের কানেকশন বাড়ানো ইত্যাদি নিশ্চিত করুন।
আমি যদি বেকার হই, তাহলে কি আমার কাজের অভিজ্ঞতা সেকশন খালি রাখব?
উত্তর: বেকার হলেও কাজের অভিজ্ঞতা খালি রাখবেন না। ইন্টার্নশিপ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ, কোর্স, ব্যক্তিগত প্রজেক্ট – এসব লিখুন। এতে আপনি আগ্রহী এবং দক্ষ – এটা নিয়োগকর্তাকে জানায়।
Writer’s Bio
Muhammad Arif Hossain

Talent Acquisition Specialist and Business Development Manager with 5+ years of experience skilled in creative writing, team leadership, business analysis & development, Talent Sourcing, documentation, technology integration, and automation.
One thought on “বাংলাদেশে চাকরি প্রার্থীদের জন্য সিভি লেখার ১০টি টিপস”