একজন ফ্রেশারের জন্য ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

ক্যারিয়ার টিপস

বর্তমানে বাংলাদেশে একটি ভালো চাকরি পাওয়া অত্যন্ত কঠিন এবং প্রতিযোগিতামূলক। পরিসংখ্যান অনুসারে,  বাংলাদেশে গ্রাজুয়েটদের প্রায় ৪৬% বেকার।তাছাড়া, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজ থেকে পাশ করে বের হওয়া ছাত্রছাত্রীদের প্রায় ৬৬% বেকার। এই তথ্যগুলো আমাদের সামনে একটি পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরে যে, একজন গ্রাজুয়েটের জন্য একটি উপযুক্ত ক্যারিয়ার গড়ে তোলা কতটা কঠিন। এই আর্টিকেলটি আপনাকে একটি সফল ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য সম্পূর্ণ নির্দেশিকা প্রদান করবে।

একজন ফ্রেশারের জন্য ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

“পর্যাপ্ত চাকরির সুযোগ নেই” – এই কথাটি আপনি বাংলাদেশে প্রায়ই শুনতে পাবেন। যদিও বেকারত্ব সমস্যা দূর করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে তবুও সমস্যাটি এতটাই গভীর যে সরকারের পক্ষেও এটি রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব হবে না। তাই একজন গ্রাজুয়েট হিসেবে, চাকরি পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নিজেকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখতে আপনাকে কিছু অতিরিক্ত উদ্যোগ নিতে হবে। একটি সফল ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য এখানে কিছু টিপস দেওয়া হল –

১। ভালো একাডেমিক ফলাফল অর্জন করুন

যেকোনো ভালো চাকরির আবেদন করার জন্য একাডেমিক ফলাফল একটি পূর্বশর্ত। আপনার ফলাফল যদি যথেষ্ট ভালো না হয়, তাহলে আপনি অনেক চাকরির জন্য আবেদন করারই সুযোগ পাবেন না। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে একজন শিক্ষার্থীর এসএসসি এবং এইচএসসিতে ন্যূনতম ৪.৫ এবং অনার্স এবং মাস্টার্স প্রোগ্রামে ৩.৫ জিপিএ বজায় রাখা উচিত।

২। স্ট্রেংথ ও উইকনেস গুলো বিশ্লেষণ করুন

আপনার স্ট্রেংথ ও উইকনেস গুলো মূল্যায়ন করে আপনাকে আপনার ক্যারিয়ারের পথ নির্ধারণ করতে হবে। আপনার স্ট্রেংথগুলি যখন আপনি জানবেন তখন আপনার পক্ষে কোন কাজগুলি আপনি আরও ভালোভাবে সম্পাদন করবেন তা জানা সহজ হয়ে যায়। অন্যদিকে, আপনার দুর্বলতাগুলি জানাও অপরিহার্য। একবার আপনি আপনার দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করতে পারলে আপনি সেগুলির উপর কাজ করতে পারেন এবং সেগুলি সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারেন। অতএব, আপনার স্ট্রেংথ ও উইকনেস গুলো বিশ্লেষণ করা আপনার ক্যারিয়ার বিকাশ প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৩। আর্লি স্টার্ট

আপনি যদি একটি ভালো চাকরি পাওয়ার পরিকল্পনা করেন, তাহলে গ্রাজুয়েশনের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকা উচিত হবে না। আপনার ছাত্রজীবন থেকে পার্ট টাইম, অকেশনাল বা ফ্লেক্সিবল চাকরি খুঁজতে শুরু করুন। এটি আপনাকে কিছু অভিজ্ঞতা পেতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, আপনি প্রফেশনালদের সাথে নেটওয়ার্কিং তৈরি করতে সক্ষম হবেন। পার্ট টাইম, অকেশনাল বা ফ্লেক্সিবল চাকরির জন্য আবেদন শুরু করার আইডিয়াল সময় হচ্ছে আপনার স্নাতক প্রোগ্রামের দ্বিতীয় বা তৃতীয় বছর।

৪। যেকোন একটি কোম্পানিতে  ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করুন

অনেক ফ্রেশার অভিযোগ করেন যে বেশিরভাগ চাকরিতে আবেদন করার জন্য এক বা দুই বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়। এই কারণে তারা সেই পদগুলির জন্য আবেদন করতে পারে না। কিন্তু আপনি যদি আপনার ছাত্রজীবন থেকে একজন ইন্টার্ন হিসেবে কাজ শুরু করেন তবে আপনি শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানযোগ্য দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন না বরং আপনার স্নাতক শেষ হওয়ার সাথে সাথে দুই থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। সুতরাং, আপনি সহজেই এমন একটি চাকরির জন্য আবেদন করতে পারেন যার জন্য কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।

৫। আপনার ব্যক্তিত্বকে শক্তিশালী করুন

নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা প্রমাণ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই আপনার মনোভাব এবং ব্যক্তিত্বের উপর কাজ করতে হবে। আপনি যদি একটি সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে চান তবে নিজের ভেতর ইতিবাচক মনমানসিকতা তৈরী করতে হবে। তাছাড়া, সকল যে সকল মানুষ সব কিছুতেই শুধু কমপ্লেইন করে বেড়ায় তাদের কেউই নিয়োগ দিতে চায় না। বরং, যারা যেকোন ধরণের সমস্যার সমাধান বের করার চেষ্টা করে কোম্পানিগুলো নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদেরকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে।   

৬। কমিউনিকেশন স্কিল তৈরি করুন

চাকরি বা ব্যবসা যেকোনো ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য সঠিক কমিউনিকেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য আপনাকে রিটেন এবং মৌখিক উভয় কমিউনিকেশনে অনেক দক্ষ হতে হবে।

৭। শক্তিশালী অনলাইন প্রেজেন্স তৈরি করুন

আজকের ডিজিটাল যুগে, একটি শক্তিশালী অনলাইন প্রেজেন্স থাকা অপরিহার্য। চাকরি পাওয়ার জন্য একটি পেশাদার লিঙ্কডইন প্রোফাইল তৈরি করুন, এবং নিয়মিত আপডেট করুন। আপনি একটি পার্সোনাল ওয়েবসাইট বা পোর্টফোলিও  সাইট তৈরি করে আপনার স্কিল এবং কোয়ালিফিকেশন গুলো সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখতে পারেন।

৮। সক্রিয়ভাবে নেটওয়ার্কিং করুন

নেটওয়ার্কিং চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনলাইন নেটওয়ার্কিংয়ের পাশাপাশি অফলাইনেও নতুন নতুন মানুষদের সাথে পরিচিতি তৈরী করুন। নেটওয়ার্ক তৈরিতে বিভিন্ন ইভেন্ট, ওয়ার্কশপ, সেমিনার ইত্যাদিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করুন। নেটওয়ার্ক তৈরির পাশাপাশি তা মেইনটেইন করার জন্য সবার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।

মনে রাখবেন, একটি সফল ক্যারিয়ার গড়তে সময়, প্রচেষ্টা এবং ডেডিকেশন প্রয়োজন। এই টিপসগুলি অনুসরণ করে এবং ক্রমাগত উন্নতির জন্য চেষ্টা করে, আপনি নিজেকে একটি ফলপ্রসূ এবং পরিপূর্ণ পেশাদার যাত্রার জন্য প্রস্তুত করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *